আজ ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লোহাগড়ায় চাঞ্চল্যকর জানে আলম হত্যা মামলার আসামি আটক।

মোহাম্মদ জুবাইর চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী ” জানে আলম ” হত্যা মামলার ২০ বছর ধরে উদ্বাস্তু ও দাড়োয়ানের ছদ্মবেশে পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী সৈয়দ আহমেদ’কে আটক করেছে র‍্যাব -৭ চট্টগ্রাম । র‍্যাবের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস্য উদ্ঘাটন , অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে । গত ৩০ মার্চ ২০০২ ইং তারিখে আদালতে স্বাক্ষী দেওয়ার প্রাক্কালে আনুমানিক সকাল ০৯.০০ ঘটিকার দিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারী ও সৈয়দ বাহিনী ব্যবসায়ী জানে আলম ( ৪৮ ) কে তার ০১ বছরের শিশু বাচ্চার সামনে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠি সোটা দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করে । যা সেই সময়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে । উক্ত ঘটনায় ভিকটিম এর বড় ছেলে মোঃ তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এখানে উল্লেখ্য যে , এর মাত্র চার মাস পূর্বে অর্থাৎ গত ০৯ নভেম্বর ২০০১ ইং তারিখে নিহত ভিকটিম এর আপন ছোট ভাই অর্থাৎ বাদীর আপন ছোট চাচাকে ঐ বাহিনী একইভাবে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠি সোটা , দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করে । উক্ত ঘটনায়ও চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ১৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। উক্ত রায়ে ১২ জনকে ফাঁসী এবং ০৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে থাকেন । পরবর্তীতে উক্ত রায়ের আসামীগন মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আপীল করলে সুপ্রীম কোর্ট সৈয়দ আহম্মেদ সহ মোট ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ও ০২ জনকে যাবজ্জীবন এবং বাকীদের খালাস দেন । জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকান্ডের মূল কারণ হিসেবে জানা যায় যে , ব্যবসায়ী জানে আলম ( ৪৮ ) গত ০৯ নভেম্বর ২০০১ ইং তারিখে তার আপন ছোট ভাইয়ের হত্যা কান্ডে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলেন । মূলত জানে আলম পরিবারের বড় ছেলে এবং আর্থিকভাবেও কিছুটা স্বচ্ছলও ছিলেন । তাই মামলা – মোকদ্দমার ব্যয়ভার তিনি বহন করতেন । এতে প্রতিপক্ষের আক্রোশ তার উপর দিন দিন বেড়ে যায় । প্রতিপক্ষের ধারনা ছিল যে , ব্যবসায়ী জানে আলকে হত্যা করলে ঐ পরিবারের মামলা – মোকদ্দমা চালাবার মত কোন লোক থাকবে না এবং প্রত্যক্ষভাবে আর কোন সাক্ষীও থাকবে না । আর্থিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে এবং তার সকল সম্পত্তি সহজে তারা গ্রাস করতে পারবে । এই কারনে ঘাতক চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্যবসায়ী জানে আলমকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে । পরবর্তীতে প্রথম হত্যার সংঘটিত হওয়ার পরপরই সৈয়দ আহম্মেদ চট্টগ্রামের বাঁশখালী বিভিন্ন ডাকাত দলের সাথে সমুদ্র পাড়ি দেয় । সেখান থেকে এসে ৪ মাস পরে আবার ব্যবসায়ী জানে আলমকে হত্যা করে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকে । সে প্রথম ০৪ থেকে ০৫ বছর তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন ছেড়ে বাঁশখালী , আনোয়ারা , কতুবদিয়ায় ও পেকুয়ায়ার সাগর উপকূলবর্তী এলাকায় থাকতে শুরু করে । পরবর্তীতে সে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় উদ্ধাস্ত্র হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ভূয়া ঠিকানা প্রদান করে অবস্থান করে । এছাড়াও সে জঙ্গল ছলিমপুরে মশিউরের ছত্রছায়ায় ও সহযোগীতায় সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে থাকে । কিন্তু পুলিশ ও র‍্যাবের অভিযানে সেখানে সে নিরাপদ মনে না করে পুনরায় সে চট্টগ্রামে বিভিন্ন মাজার এলাকায় বাবুর্চির কাজ নিয়ে থাকে । এরপর চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানায় একটি বাড়ীতে দাড়োয়ানের ছদ্ম বেশে কাজ নেয় এবং সেখানে সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে । পলাতক থাকাকালীন সময় আসামী সৈয়দ আহম্মেদ ভুয়া ঠিকানায় দুটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে ফেলে এবং তার পরিবার – পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে । যার কারনে তাকে কোনভাবেই ব্যবসায়ী জানে আলমের হত্যা মামলার আসামী বলে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না । র‍্যাব -৭ , চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে , ব্যবসায়ী জানে আলমের হত্যা মামলার ০২ নং ও অন্যতম প্রধান আসামী এবং উক্ত মামলার ২০ বছর ধরে উদ্বাস্তু ও দাড়োয়ান সেজে পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী সৈয়দ আহমেদ চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানা এলাকায় অবস্থান করছে । উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৭ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখ দুপুর ৩.০০ ঘটিকায় র‍্যাব ৭. চট্টগ্রাম এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী সৈয়দ আহম্মেদ ( ৬০ ) কে আটক করে । পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলায় ২০ বছর ধরে উদ্ধান্ত ও দারোয়ান সেজে পলাতক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী বলে স্বীকার করে ।গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

     এই বিভাগের আরও খবর